কলমে – সুপ্রিয়া দে

শুভমিতা খুব চঞ্চল উচ্ছ্বসিত পরিপূর্ণ এক সংসারী নারী।বেশভুষনে বোঝা যায় না সে শিক্ষিত। খুব সাধারন জীবন যাপনে অভ্যস্থ সে। বাইরে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে।জানলার গ্রিল ধরে অঝোরে কাদঁছে। কোথায় তার বেদনা সে নিজে ও অনুভব করতে পারলে ও প্রকাশের ভাষা নেই। কান্নার বোবা শব্দে বৃষ্টির অঝোর ধারা সাথে অদ্ভূত মিল।

শুভমিতার কিছু দিন আগে হার্টের সমস্যা ধরা পড়েছে। ইদাংনি এতো বিষন্নতায় ভুগছে। যেন প্রাণহীন জীবন। ছন্দ নেই কোথাও। শুভমিতা একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করে। প্রতিদিনই বাসে করে যাতায়াত করে অফিসে। সে পথে যাতায়াতে চেনা অচেনা অনেক মানুষের সাথে তার দেখা হয় কথা হয়। এক ভদ্র লোক হঠাৎই সামনে এসে খুব বিনয়ের সাথে শুভমিতার সাথে পরিচয় পর্বটি সেরে ফেললো। ভদ্র লোক ঐ পথে যাতায়াত করে তবে দেখা হয় না বললেই চলে।

আজকে অফিস বন্ধ। তাই ঘুম থেকে দেরি করে ওঠা।ফোন বাজছে। রিংটোন শুনতেই শুভমিতা ফোন কল রিসিভ করলো। অন্তু খুব বিনয়ের সাথে শুভমিতাকে বললো যদি আপনি কিছু মনে না করেন তাহলে কালকে আমি আপনার সাথে একটু কথা বলতে চাই। শুভমিতা আগে পিছে না ভেবে বললো কি আর বলবে এখন তো আর বয়েস কুড়িতে নেই। তাই চিন্তা করার কোন কারন নেই।

পরদিন সকালে নিদির্ষ্ট সময়ে দেখা হল অফিস ফেরার পথে। কোন রেস্তোরাঁয় বসে নি।সোজা অটোতে দুজনে চেপে বসে। কথা ও হবে সঙ্গে পৌছে দেওয়া ওহবে। অন্তুর বয়েস পঞ্চাশই হবে বোধহয়।

অন্তু- শুভমিতা তোমাকে প্রতিদিন আমি দেখি। তোমার ব্যাক্তিত্ব আমার মনকে আবিষ্ট করে ফেলেছে। জানি কথা গুলো এ বয়সে এসে বলা ঠিক না।তবু আমার মনকে আমি স্থির রাখতে পারছি না।যদি আমরা এক হতে পারতাম তাহলে আমি কতো সুখীই না হতাম।

শুভমিতা- স্থির থেকে বললো।সে কি করে হয়।আমরা তো বিবাহিত তবে এমন প্রশ্নের উওর একটায়। না এ সম্ভব নয়।

অন্তু- কেন নয়?

শুভমিতা- আসলে আপনাকে ঘিরে আপনার পরিবারে আরো তিনজন মানুষের ভরনপোষণ হয়। ঠিক তেমনি আমাকে ঘিরে আমার পরিবার নির্ভর করে সুখী জীবনের আশা করে। এছাড়া এটা কোন ভাবেই সম্ভব না। হ্যাঁ আমি রিয়েক্ট করছি না।একটা মানুষ আর একটি মানুষেকে ভালো বাসতে বা ভালো লাগতেই পারে কিন্তু দুই পরিবারের বন্ধন শেষ করে নতুন এক বন্ধনে জড়িয়ে পড়া এটা নিজের ও দশের জন্য হিতকর নয়।

অন্ত- দুচোখের জল ছেড়ে দিয়েছে বলছে সে আমি ও জানি। তবে তোমার প্রতি দূর্বলতা সে আমার আজীবন থাকবে।

শুভমিতা- আপনি হয়তো বুঝে শুনো আবেগ তারিত হয়ে এ সব বলছেন। শুধু আবেগ কেন? আমরা পরস্পর বিধর্মী। এটা কখনো হিতকর সম্পর্কে আগাতে পারে না।

অন্তু- আমি তোমার কথা মেনে নিয়েছি। তাহলে কথা দিও যাও তুমি কোন জন্মে আমার হবে।

শুভমিতা- সে আমার ইচ্ছে মতো হবে এমন তো কথা নেই। তবে আপনার ভালোবাসা যদি সত্যিই হয় তাই স্রষ্টাই ঠিক করে দেবেন।দুজনের বোঝাপড়াতে সম্পর্কের ইতি টানলেন দুজনেই।

দুজনের মধ্যে বোঝাপড়ায় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। যা আধুনিক যুগে মানুষ কোন না কোনভাবেই যোগাযোগ রক্ষা করতে চায় তার প্রিয় মানুষ টির সাথে। ফেইসবুকে ফ্রেন্ডের সুবাধে টাইমলাইনে বিশেষ দিনে বিশেষ শুভেচ্ছা বার্তা দিতে ভুল হয় না কারো।

এভাবেই দীর্ঘ আটবছর অতিবাহিত হয়েছে। শুভমিতা কখনো অন্তুর প্রতি দূর্বল ছিলো না।তবে পরিচয়ের সূত্র ধরে তার প্রতি অনূভুতি প্রবল হচ্ছে দিন দিন। হঠাৎ ফোনে চোখে পড়লো অন্তুর মৃত্যু সংবাদ। করোনা মহামারিতে হঠাৎ ই এমন দুসংবাদ শুভমিতার জন্য বেশ কষ্ট বটে।

কি এক অজনা কষ্টে তার দুচোখ অশ্রু সিক্ত। শুধুই অঝোরে ঝড়ছে অশ্রুধারা। তবে কি শুভমিতার কান্না ও কি বৃষ্টির কান্নার সাথে বন্ধ হয়ে যাবো? মনের আকাশে জমানো মেঘ কি কেটে যাবে?ধুয়ে যাবে কি অন্তরে দাগকাটা ব্যক্তিটির মোহ?নানা প্রশ্নই মনের মধ্যেই আনচান করে। হয়তো শুভমিতা আবারো অন্তুর কথা মনে করে কোন এক বৃষ্টির দিনে মনে করে কাঁদবে……

শুভমিতা বলবে কি অপেক্ষায় থেকো। এজন্মের সকল ব্যাথা হবে অবসান হবে অন্য জন্মের কালচক্রে। অন্ত অপেক্ষা করো অপেক্ষা করো।