”কমিউনিস্টদের তো একটাই লক্ষ্য হওয়া উচিত, ‘শোষণ ও শ্রেণীহীন সমাজ।’ যদি আমরা আমাদের দায়িত্বগুলোকে এড়িয়ে যেতেই থাকি। তবে দেখবেন, একটা সময় পর আমাদের অর্জিত ডিগ্রিগুলোই ভারী হয়ে ঊঠবে । এত ভারী হয়ে উঠবে যে এই ভার বহন করা আর সম্ভব হয়ে উঠবে না। যার যত ক্ষমতা, তার তত দায়িত্ব, তত কর্তব্য। সাধারণ মানুষের মুক্তির পথ দেখানোর দায়িত্ব কার? আপনার, আমার, আমাদের।”
– আসলে, আপনি কে বলুন, তো?
– সেটা জানলে, আমি কি আর আপনাদের গ্রামে পড়ে থাকতাম?
– শুনেছি আপনি নাকি অন্য কারুর সাথে তেমন বেশি কথাও বলেন না। কিন্ত আমার সাথে এত কথা বলছেন ?
– আপনার সাথে কথা বলতে আমার ভাল লাগে, তাই। কেন, এতে আপনার কোন আপত্তি?
– না, না আপত্তি থাকবে কেন? বরং ভালই লাগে আপনি অনেক জ্ঞাণের কথা বলেন।
– জ্ঞাণটাকে যদি কাজে লাগাতে পারতেন? তবে আমাদের এই সমাজ, গ্রাম তথা দেশটাকে সহজেই পরিবর্তণ করা যেত।
কথোপকথনের মাঝে হঠাৎ অদূর থেকে হাক ডাক। রাতুল, ,রাতুল , , ,
– কিরে উত্তম, কি হয়েছে?
– তুই এহানে, তোর মা’য় তোরে খুঁজতাছে।
-কেন?
– ক্যান আবার, খাওনের লাইগা। বাড়িতে আহনের লগে লগেই তো এহানে চইলা আইছোস।
– আচ্ছা দাদা, আমি তাহলে এখন আসি। পরে আবার কথা হবে।
– ঠিক আছে, ভাল থাকবেন। আপনার বাবা মাকে আমার প্রণাম দিবেন।
রাতুল ও উত্তম চলে গেল। পাড়ভাঙা পদ্মার পাড়ে নদীর জলের দিকে চেয়ে বসে রইল অভিজিৎ । চারিদিকে ফাঁকা। অদূরে পদ্মার বুক জুড়ে শুধু জল আর জল। বর্ষার মৌসুম। পাড়ে জলের ছলাৎ ছলাৎ আওয়াজ। পেছনে শান্ত গ্রাম। ঝিরিঝিরি খোলা বাতাস বইছে। এর মাঝে অভিজিতের তিক্ষ্ণ দৃষ্টি নদীর জলের দিকে । এই তিক্ষ্ণতা যতটা না নদীকে দেখার জন্য তার চেয়ে বেশি ভাবনার জন্য। অভিজিত ভাবে। একটু অবসর পেলেই ভাবে।
সুবোধ, তুই পালিয়ে যা , , , , ,
পার্ট-২
কে এই অভিজিত? কি তার পরিচয়? কেউ জানে না। একদিন উত্তম, মোহন, অচিন্ত্য ও পরিতোশ বাদাম তুলে নদীর এক পাশ দিয়ে হেটে হেটে বাড়ির দিকে ফিরছিল। হঠাৎ উত্তম পরিতোশকে উদ্দ্যেশ্য করে চেচিয়ে বলে ঊঠলো,
– কাহা কাহা,
-কি রে?
তর্জনী দিয়ে দেখিয়ে বলল,
– ঐ দেহো।
উপুর হয়ে পড়ে আছে একটি ব্যক্তির নিথর দেহ। ভিতু দৃষ্টিতে একজন আরেকজনের দিকে চোখাচুখি করতে লাগলো। সবাই থমকে গেল। সংশয়ে অচিন্ত্য বলল,
– লাশ! চল তো যাই, দেহি।
– আমি পারুম না। আমার ডর করে।
সবাই-ই ভিতু সন্ত্রস্ত। আমাদের দেশে এখন নদীতে মানুষের লাশ খুবই সাধারণ একটা ব্যাপার। এতে আশ্চার্যিত হবার কিছুই নেই। কিন্ত মৃত মানুষের লাশের প্রতি যে একধরনের ভয় সেই ভয়টাই কাজ করছিল উত্তম, মোহন, অচিন্ত্য ও পরিতোশের। মোহন সাহস করে কাছে যায়। উপুর হওয়া দেহটাকে সোজা করতেই ভয়ে আতকে পিছনে চলে যায়। চোখে, মুখে, কপালে ও সারা শরীরের কালচে ডোরা কাটা নৃশংসভাবে প্রহারের চিহ্ন। এমনভাবে মানুষ মানুষকে মারতে পারে?
বেঁচে আছে কিনা কৌতুহলে পরিতোশ নাকের কাছে হাত দিতেই বুঝলো শ্বাস প্রশ্বাস চলছে। সবার মুখের দিকে তাকিয়ে বিস্ময়ের সাথে বলল।
-বাইচা আছে।
সেদিনের পর থেকে অভিজিত পরিতোশের কাছেই রয়ে গেছে।